কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠকবৃন্দ আশা করি আপনারা সকলেই ভালোই আছেন। বিগতদিনগুলির
মতো আজকেও আমরা আপনাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কোয়েল পাখির ডিম সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করব। আজকে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। তো
আপনি আপনারা কি কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে চেয়ে
আমাদের এই আর্টিকেলে এসেছেন? তাহলে এই পোষ্টটি আপনার জন্য উপকার হতে চলেছে।
কেননা এই আর্টিকেলটি যদি আপনারা অবহেলা না করে মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়েন,
তাহলে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা জানার পাশাপাশি কোয়েল পাখির ডিম
প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায়, কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক, কোয়েল পাখির ডিমের
দাম কত সহ আরও অন্যান্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ অজানা তথ্যগুলো
আপনারা জানতে পারবেন। তাই আমার মনে হয় একেবারেই অবহেলা না করে মনোযোগ দিয়ে এই
পোষ্টটি পড়ে জেনে নেওয়া।
ভূমিকা - কোয়েল পাখি
একজন মানুষের বয়স ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেই ডিম পরিহার করতে বলা হয়। কেননা
ব্রয়লারের ডিমগুলো খেলে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু তার পরিবর্তে
কোয়েল পাখির ডিম যেকোনো বয়সের মানুষেরা সহজেই নিসঃকোচে খেতে পারবেন। আমাদের
দেশে ইদানিং খাবার হিসেবে কোয়েল পাখির ডিমের বেশ জনপ্রিয়তা লক্ষ করা
যাচ্ছে।
গড়ে উঠছে অনেক কোয়েল পাখির খামার। তাই এ ডিমের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারের
কথা জানতে চান অনেকে। তাই আজকের আমরা কোয়েল পাখির ডিম সম্পর্কে আপনাকে
এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করব যা জেনে উপকৃত হতে পারবেন। তাহলে চলুন
আর অতিরিক্ত কথা না বাড়িয়ে মূল টপিকে আলোচনা শুরু করা যাক। আমরা প্রথমে
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতাগুলো জেনে নিব।
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
কোয়েল পাখির ডিম দেখতে ছোট হলেও এতে প্রচূর পরিমাণে উপকারিতা রয়েছে। কোয়েল পাখি
ডিমে বিদ্যমান স্বাস্থ্য গুনাগুণ নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: কোয়েলের ডিমে রয়েছে ভিটামিন- ডি, এ, ই- বি১২ ও জিংক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে: কোয়েলের ডিমে রয়েছে আয়রন যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে।
- দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে: কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে ভিটামিন-এ যার ফলে এটি চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: কোয়েলের ডিমে রয়েছে পটাশিয়াম যা দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে: কোয়েলের ডিমে রয়েছে কোলিন যা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- দাঁতের জন্য উপকারী: কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী।
- শিশুদের জন্য উপকারী: কোয়েলের ডিম ছোট বাচ্চাদের বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিম খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হৃদরোগ
প্রতিরোধে সাহায্য করে, হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, ত্বকের স্বাস্থ্যের
উন্নতি করে, গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে, গর্ভস্থ শিশুর
মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে, গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য
করে।
কোন গর্ভবতী নারীর যদি কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে তাহলে কোয়েল পাখির ডিম
সর্বোচ্চ তার ১টি খাওয়া উচিত। তবে যদি কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে সেক্ষেত্রে
সর্বোচ্চ দিনে ২টি পর্যন্ত খেতে পারে। গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিম রান্না
করে খাওয়া ভালো। কারণ, কাঁচা ডিম খেলে গর্ভবতী মায়ের পেটে অসুখ হতে পারে।
যেহেতু গর্ভাবস্থায় নারীদের সব সময় সতর্কতা অবলম্বন করে যে কোন কাজের
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় সেক্ষেত্রে কোন গর্ভবতী নারীর যদি কোয়েল পাখির ডিম
খেতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে চিকিৎসকের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।
কারণ অনেক সময় কোয়েল পাখির ডিম ঠিকমতো হজম হয় না, সেক্ষেত্রে গর্ভবতী মা এবং
শিশুর স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ
থেকে গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা তা জানতে পেরেছেন। এবার
চলুন, কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায় তা জেনে নেই।
কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায়
আপনার শারীরিক পরিস্থিতির উপর সম্পূর্ণই নির্ভর করছে যে কোয়েল পাখির ডিম আপনি
প্রতিদিন কয়টা খাবেন। কোয়েল পাখির ডিমে অন্য সব ডিমের চেয়ে একটু বেশি
কোলেস্টেরল রয়েছে এজন্য কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে কোয়েল পাখির
ডিম কম খাওয়াই ভালো। কোলেস্টেরল থাকলে আপনি সর্বোচ্চ ১ থেকে ২টি ডিম খেতে
পারেন।
তবে যদি কোলেস্টেরল এর কোন সমস্যা দেহে না থাকে তাহলে কোয়েল পাখির ডিম ২টি
থেকে ৩টি পর্যন্ত খাওয়া যায় এতে কোন সমস্যা হয় না। তবে আপনার আর্থিক অবস্থাটাও
বিবেচনা করতে হবে। আর্থিক অবস্থা যদি খুব একটা ভালো না হয় তাহলে একাধিক কোয়েল
পাখির ডিম খাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ দাম হিসাবে কোয়েল পাখির ডিমের দাম মুরগির
ডিমের তুলনায় অনেক কম।
তবে আপনি যদি কোন রোগের জন্য ঔষধ সেবন করে থাকেন তাহলে অবশ্যই কোয়েল পাখির ডিম
খাবার পরবে আপনার চিকিৎসকের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন। কারণ কোয়েল পাখির
ডিমে অনেক শক্তিশালী উপাদান রয়েছে যেগুলো আপনার ঔষধের ওপরে ক্ষতিকর প্রভাব
ফেলতে পারে। তাই অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোয়েল পাখির ডিম খাবেন
না।
তবে আপনি যদি কোয়েল পাখির ডিম খেতে চান তাহলে সকালে খালি পেটে খাওয়ার চেষ্টা
করতে হবে। কেননা কোয়েল পাখির ডিম খালি পেটে খাওয়ার ফলে দেহের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। তবে আপনি
দুপুরে কিংবা রাত্রেও কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন এতে কোন সমস্যা হবে না।
কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক
প্রতিটা খাবারে উপকারিতা থাকার পাশাপাশি সামান্য পরিমাণ হলেও ক্ষতিকর দিক রয়েছে।
কোয়েল পাখির ডিম নিশ্চয় তার ব্যতিক্রম নয়। এজন্য আর্টিকেলের এই অংশে কোয়েল
পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করা হবে, যার ফলে আপনারা খুব সহজে অনুধাবন করতে
পারেন।
কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি: কোয়েল পাখির ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ
প্রায় ১.৪ মিলিগ্রাম। তাই যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি রয়েছে তাদের কোয়েল
পাখির ডিম খাওয়ার ফলে শারীরিক মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই আপনার যদি
কোলেস্টেরল বেশি থাকে তাহলে কোয়েল পাখির ডিম খাবেন না।
এলার্জির প্রাদুভাব: কোয়েল পাখির ডিমে অবশ্যই এলার্জি রয়েছে। তাই আপনার
শরীরে এলার্জির কোন সমস্যা থাকলে কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া যাবে না। কারণ
এলার্জি খুব অল্প সময়ের মধ্যে মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে । এজন্য অ্যালার্জি
থাকলে কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
পেটের পীড়া: কোয়েল পাখির ডিম রান্না না করে খেলে অনেক সময় তা হজম হয়
না, ফলে পেটে বিভিন্ন ধরনের পীড়া দেখা যেতে পারে। তাই কোয়েল পাখির ডিম সবসময়
রান্না করে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
এই তথ্যগুলো আপনাকে ভালোভাবে অনুধাবন করতে হবে। এজন্য কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার
আগে অবশ্যই দেখতে হবে যে আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা। আশা
করছি আপনারা এই অংশ থেকে কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিকগুলো জানতে
পেরেছেন। এবার চলুন, শিশুদের কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম কি তা জেনে
নেই।
শিশুদের কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম
শিশুদেরকে আপনি মুরগির ডিমের মতো সিদ্ধ করে, বয়েল করে, রান্না করে বিভিন্নভাবে
খাওয়াতে পারেন। তবে আমার মতে আপনারা আপনাদের শিশুদের কোয়েল পাখির ডিম বয়েল
করে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। কারণ বয়েল করলে ডিমের পুষ্টিগুন অটুট থাকে এমনকি
অনেক ক্ষেত্রে ডিমের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়। এজন্য অবশ্যই বয়েল করে খাওয়ানোর
চেষ্টা করবেন।
কোয়েল পাখির ডিমে কি এলার্জি আছে?
কোয়েল পাখির ডিমে এলার্জিক উপাদানের মধ্যে রয়েছেঃ অ্যালবুমিন, গ্লোবুলিন,
ইমিউনোগ্লোবুলিন। কোয়েল পাখির ডিমের সবথেকে বেশি এলার্জি রয়েছে এর কুসুমের
মধ্যে। কারণ কুসুমের মধ্যে অ্যালবুমিন নামক উপাদান রয়েছে, যেটি এলার্জির জন্য
বিশেষভাবে দায়ী।
এছাড়া কোয়েল পাখির ডিমের সাদা অংশে রয়েছে গ্লোবুলিন, যেটির কারণেও এলার্জি
হতে পারে। যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের উচিত একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের
পরামর্শ গ্রহণ করে পরিমিত পরিমানে কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া।
তবে যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তারা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে কোয়েল পাখির ডিম খায়
তাহলে তাদের চোখ, মুখ, গলা, বা শ্বাসনালীর ফুলে যাওয়া, কাশি, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট
, ত্বকে ফুসকুড়ি বা চুলকানি, বমি বমি ভাব বা বমি, পেটব্যথা বা ডায়রিয়া হতে
পারে। আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে কোয়েল পাখির ডিমে কি এলার্জি আছে কিনা
জানতে পেরেছেন। এবারচলুন, কোয়েল পাখির ডিমের দাম জেনে নেই।
কোয়েল পাখির ডিমের দাম কত
কোয়েল পাখির ডিমের আজকের বাজারদর অনুযায়ী প্রতি পিস কোয়েল পাখি ডিমের দাম হচ্ছে
৫ টাকা থেকে শুরু করে ৬ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ এক হালি বা ৪ পিচ কোয়েল পাখির ডিম
কিনতে হলে আপনাকে ২০ টাকা থেকে ২৪ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হবে। আবার ১ খাচি
কিনতে হলে আপনাকে ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে
হবে চান।
লেখকের শেষ মন্তব্যঃ কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
আমরা আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের কোয়েল পাখির ডিম সম্পর্কে জানানোর
বা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমরা এখানে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা, কোয়েল
পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক, কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায়সহ এর
বিভিন্ন দিক আলোচনার মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আপনারা কোয়েল
পাখির ডিম সম্পর্কে জেনে উপকৃত হতে পেরেছেন।
কোয়েল পাখির ডিম সম্পর্কিত আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের
মাঝে শেয়ার করে দিবেন। এতে তারাও কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে
বিস্তারিত তথ্যগুলো জানতে পারবেন। বিভিন্ন রোগ সম্পর্কিত অন্যেন্য প্রয়োজনীয় ও
জরুরি তথ্য পেতে আমাদের টিপস অ্যাকটিভ সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
ধন্যবাদ।
